ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন কি পূরণ হবে না ফারজানার?
স্টাফ রিপোর্টার
আপলোড সময় :
২৫-০১-২০২৫ ০৪:৩১:১৩ অপরাহ্ন
আপডেট সময় :
২৫-০১-২০২৫ ০৪:৩১:১৩ অপরাহ্ন
ফারজানা আক্তার তামান্না
প্রত্যন্ত অঞ্চলের মেয়ে ফারজানা। প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ার সময় স্বপ্ন দেখেছিল বড় হয়ে ডাক্তার হবেন। সেই স্বপ্ন পূরণে কঠোর পরিশ্রম দিয়ে পড়াশোনা করেছেন তিনি। মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন ফারজানা। কিন্তু আর্থিক সংকটের কারণে মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়ে লেখাপড়া করে ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন অনেকটা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে তাঁর।
পুরো নাম ফারজানা আক্তার তামান্না। বাড়ি পটুয়াখালী জেলার গলাচিপা উপজেলার গোলখালী ইউনিয়নের বড় গাবুয়া গ্রামে। মো. আলাউদ্দিন এবং মিসেস সেলিনা বেগমের দুই মেয়ের মধ্যে ফারজানা ছোট। বড় বোন ইশরাত জাহান লিয়া এবার বিএ পরীক্ষা দিয়েছে। ফারজানার বাবা মো. আলাউদ্দিন এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে তা ফেরত দিতে না পেরে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। মা সেলিনা বেগম গৃহিণী।
২০২৩ সালে এইচএসসি পাস করে অংশ নেয় মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায়। কিন্তু সেবার উত্তীর্ণ হয়েও কোন মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পায়নি তামান্না। মানুষের কটুকথা ও হতাশাকে পেছনে ফেলে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে আবারো ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে সাফল্যের সাথে উত্তীর্ণ হয়ে ৪৭২৮ তম মেধাতালিকা নিয়ে পটুয়াখালী সরকারি মেডিকেল কলেজে ভর্তির জন্য মনোনীত হয়েছেন ফারজানা। নিজের স্বপ্ন পূরণের পাশাপাশি দরিদ্র পরিবারের মেয়ে তামান্না বাবা মায়ের মুখেও হাসি ফুটিয়েছেন। তার স্বপ্ন একদিন সুচিকিৎসক হয়ে গ্রামের অসহায় মানুষের চিকিৎসা নিশ্চিত করবেন।
ফারজানা হরিদেবপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে ২০১৫ সালে পিএসসিতে জিপি ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন। গলাচিপা বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে ২০১৮ সালে জেএসসি ও ২০২১ সালে এসএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হন ফারজানা। পরে ভর্তি হন বরিশাল সরকারি মহিলা কলেজে। সেখানে ২০২৩ সালে এইচএসসি পাস করেন জিপিএ ৪.৯২ পেয়ে। এবার ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের এম.বি.বি.এস. প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষায় বরিশাল শেরে ই বাংলা মেডিকেল কলেজ পরীক্ষা কেন্দ্রে পরীক্ষা দিয়ে তার টেস্ট স্কোর ৭৮ ও মেরিট স্কোর ১৭৪.২ নম্বর।
স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা যায়, ফারজানার গ্রামের আশেপাশের কোন গ্রামে মেডিকেলে পড়া শিক্ষার্থী নাই। দরিদ্র বাবা মো. আলাউদ্দিন কষ্ট করে টাকা ঋণ করে, জমিজমা বিক্রি করে মেয়ের পড়াশোনা করিয়েছেন। ঋণের টাকা পরিশোধ না করতে পারে গত দুই বছর ধরে ঢাকাতে অবস্থান করছেন। সবসময় মা-বাবার ইচ্ছে ছিল শতকষ্টের মধ্যে মেয়েদের পড়াশোনা চালিয়ে নিবেন। ফারজানার এই অসাধারণ সাফল্য প্রমাণ করে, কঠোর পরিশ্রম এবং সঠিক দিকনির্দেশনা থাকলে প্রতিকূলতাকে জয় করা সম্ভব। আর্থিক অস্বচ্ছলতার কারণে সে কোচিং করতেও পারেনি। তারপরও আটকে থাকেনি অদম্য মেধাবী ফারজানার জয়যাত্রা। সকল প্রতিকূলতা জয় করে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে ফারজানা।
ফারজানা জানান, আমার এই উত্তীর্ণ হওয়ার গল্পটা এত সহজ ছিলনা। খুব কষ্টের কাহিনী ছিল। আমি এত কষ্ট কখনোই করিনি। টাকার কষ্ট-মানুষের কথা সব সহ্য করতে হয়েছে আমাকে। এখন আমি পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজে ভর্তি হবো এই আর্থিক অবস্থা আমাদের নেই।
ফারজানার মা সেলিনা বেগম বলেন, এমনিতেই আমরা খুব গরীব। দুই মেয়েকে লেখাপড়া করাতে গিয়ে অনেক ঋণ নিতে হয়েছে। কিস্তির জন্য এনজিও থেকে বাড়িতে আসে এই ভয়ে ফারজানার পিতা দুই বছর ধরে ঢাকাতে পড়ে রয়েছে। ফারজানার স্বপ্ন ডাক্তার হওয়া। সেলিনা বেগম কান্না জড়িত কন্ঠে বলেন, সমাজের বিত্তবানরা এগিয়ে না আসলে ফারজানার মেডিকেলে ভর্তি হতে পারবে না। আর ওর ডাক্তার হওয়ার স্বপ্নও পূরণ হবে না। এখানেই শেষ হয়ে যাবে ফারজানার লেখাপড়া। (ফারজানার মুঠোফোন নম্বর ০১৬০৫৮৬৩৫৯১)।
বাংলা স্কুপ/ প্রতিনিধি/এসকে
প্রিন্ট করুন
কমেন্ট বক্স